কিছু দিন আগে পর্যন্ত মুনাওয়ার ফারুকির নামও কেউ শোনেননি। সে একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান। এখন তিনি চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছেন। ঠিক যেমন এম এফ হুসেন হিন্দু দেবতাদের নগ্ন ছবি তৈরি করে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছিলেন। ফারুকিও এখন হিন্দু দেব-দেবীদের সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করছে। ইন্দোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন কিছু ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা এই গ্রেফতারিকে অন্যায় আখ্যা দিচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া উল্টো-পাল্টা মন্তব্য করছেন। অনেকেই আবার বলছেন, ফারুকি কিছু অন্যায় করেননি। কিন্তু, তাকে মারধর কেন করা হয়েছিল, তা তাঁরা বলছেন না। কাউকে মারধর করা অন্যায়। কিছু তো নিশ্চয়ই হয়েছিল। সেজন্য তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ তাকে প্রথমে আদালতে পেশ করা হয়েছিল, তারপর বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে ফারুকির বিরুদ্ধে। তাকে যদি তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের নজরে খুব ভালো হতো আমাদের আইনি ব্যবস্থা, আমাদের সংবিধান। সে জখম জামিন পায়নি, তখন বলছে সবকিছু বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এসব ঠিক নয়। জামিন পেয়ে গেলে, এরাই লিখত বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তাঁদের মন মতো না হওয়ায়, গণতন্ত্রের হত্যা হয়ে গেল।
এখন প্রশ্ন হল, ফারুকি অথবা হুসেন কেন নিজেদের ধর্মের আরাধ্যদের অপমান করেনি? এমনটা করে তো দেখাক তারা। হিন্দু দেব-দেবীদের অবমাননা করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তদন্তকারী সংস্থার ফারুকিকে প্রশ্ন করা উচিত, কার নির্দেশে সে এমনটা করেছে। সে কী নিজের বাবা-মাকেও এভাবে অপমান করে?চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেন তাঁর চিত্রকলার জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। কিন্তু হিন্দু দেব-দেবীদের নগ্ন ছবি তৈরি করে নিজের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে সে। ভারতের একজন প্রখ্যাত শিল্পী হিসেবে ১৯৭৩ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৯১ সালে পদ্ম বিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু, মাত্র একটি কুকর্মের জন্য নিজের ভাবমূর্তি ভুলুন্ঠিত করেছেন তিনি। দেখেন সেই সময়ও হুসেনের সমর্থনে অনেকে সরব হয়েছিল। ২০০৬ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতেই ভারত থেকে পালিয়ে যান। জাকির নায়েক তো এমনটাই করেছিল। তিনি নিজেকে ইসলাম ধর্মের মহাজ্ঞানী মনে করতেন। ইসলাম ধর্ম কী মন্দির ভাঙার শিক্ষা দেয়? দেবতাদের উপহাস করতে শেখায়? মোটেও এমনটা নয়। প্রবীণ ইসলামী চিন্তাবিদ মৌলানা বহিদুদ্দিন খানও তা মনে করেন না। মৌলানা বহিদুদ্দিন খান আমাদের মাঝে থাকা অত্যন্ত স্বস্তির। গান্ধীবাদী মৌলানা প্রায় ৭০ বছর আগে আজমগড় থেকে দিল্লি এসেছিলেন। মৌলানা একজন শান্তির দূত। তিনি নিরন্তর ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখেন ও বলেন। জাকির নায়েক সম্প্রতি পাকিস্তানে মন্দির ভাঙার সমর্থন করেছিল। একটি ভিডিও আবার ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে জাকির নায়েককে বলতে শোনা গিয়েছে, পাকিস্তানে মন্দির ভেঙে ফেলা একেবারে সঠিক। এসব শুনলে সত্যি মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। এমনকি ভারতেও হিন্দু দেব-দেবীদের অপমান করা হচ্ছে।কোনও ধর্মকে অপমান অথবা অবমাননা করার অধিকার কারও নেই। কোনও হিন্দু যদি অন্য কোনও ধর্মের অবমাননা করে, তাহলে সেও ততটাই খারাপ। জাকির নায়েক মালয়েশিয়ার শহর পুত্রাজয়ায় থাকত। একজন বিষাক্ত মানুষ সে। নায়েক মালয়েশিয়ার হিন্দুদের নিয়েও অনেক খারাপ কথা বলেছিল। নায়েকের বিষয়ে মনে হয়, হিন্দু এবং হিন্দু ধর্মের বিষয়ে সে এই কারণেই অভব্য কথা বলে যাতে মালয়েশিয়া থেকে তাকে বের করে দেওয়া হলে, সে যাতে পাকিস্তানে আশ্রয় পায়। ভারতকে যারা অপমান করে, তাদেরই পাকিস্তানের বেশি পছন্দ। উদাহরণ স্বরূপ, দাউদ ইব্রাহিমের মতো সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। দাউদের ইশারায় ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল। ভারতীয় সমাজের চরিত্র হল-ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু, আমাদের দেশের কেউ কেউ হিন্দু ধর্মকে অপমান করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করে।
হিন্দু দেব-দেবীদের কেন অপমান করা হয় : আর কে সিনহা
Loading...