বাঁকুড়া, ১৩ জানুয়ারি : রাত পোহালেই মকর সংক্ৰান্তি। ওইদিন দক্ষিন বাঁকুড়া সহ জেলার প্ৰত্যন্ত গ্ৰামাঞ্চলে টুসু ভাসানে মেতে উঠবে। ভোৱেৱ আলো ফোটার আগেই দলবেঁধে মেয়েরা গান গাইতে গাইতে নিকটস্হ নদীতে হাজির হয়।ফুল মালা প্ৰদীপ দিয়ে সাজিয়ে ভেলার মত সুসজ্জিত চৌদলে সাজিয়ে তুসুকে ভাসান দেওয়া হয়।এর আগে সারা রাত্ৰি ধরে চলে তুসুর বন্দ’না গান।তুসু শুধুমাত্র বাঁকুড নয়
টুসু পরব দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার পুরুলিয়া,বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়খণ্ডের ধলভূম, মল্লভূম, সিংভূম, সরাইকেল্লা, রাঁচী(বুণ্ডু, তামাড়, সিল্লী)র সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব।এই উৎসবের প্রাণ হল গান। তুসু গান মূলত পার্বণ গীত। তুসু পরব সম্বন্ধে ড: আশুতোষ ভট্টাচার্য লিখেছেন ,”টুসু রাঢ় অঞ্চলের শষ্যোৎসব।যখন অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে ধান্য পাকিয়া ওঠে ও প্রতিগৃহ নতুন শষ্যে পরিপূর্ণ হইয়া যায়, তখনই এই উৎসব আরম্ভ হয়।ইহা তুষতুষালি ব্রত নামেও পরিচিত।” অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান দিয়ে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। এরপর পয়লা পৌষ থেকে প্রতি দিন সন্ধ্যায় বিশেষ ভাবে কুমারী মেয়েরা সমবেত হয়ে টুসু গীত গাইতে থাকে। একটি মাটির সরাতে তুষ (ধানের খোসা চূর্ণ)ভরে তার ওপর গাঁদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়। সরায় সংলগ্ন প্রদীপ জ্বালিয়ে একটি ছোট জলচৌকির ওপর টুসু দেবীর প্রতিষ্ঠা করা হয়।বস্তুত ধান থেকে নির্গত চাল কে যেরূপ লক্ষ্মী রূপে পূজা করা হয়, অনুরূপে তুসুকে ব্রত গানে পূজা কৱা হয়। এই রূপ গানের মাধ্যমে নবান্ন ও টুসু পরবের আনন্দোচ্ছ্বাস সুন্দর ভাবে ব্যক্ত হয়েছে– নবান্নের ধান ভানলাম দিনক্ষণ করে,/তার গুচ্ছেক কুড়া রাখলাম তুষাল মায়ের তরে।/তুষাল গো রাই,/আমরা ছাবড়া পিঠা খাই লো,/ আলোতিল খাই,/বাটিতে করে সাঁজাই দিব খাও টুসাল মাই। বলা বাহুল্য, তুসু পূজার কোনও মন্ত্র নেই। টুসু গান ই টুসূ পূজা। তাদের গানেই তার স্বীকারোক্তি—মন্ত্র, তন্ত্র জানি না গো মা /হামাদের সোনার যাদুমনি তুমি গো।/কি বইলে পূজিব যাদুমনি গো,/বছর আইলে পূজায় মনভরে গো।এইভাবে একমাস( সারা পৌষ মাস) সন্ধ্যায় ধূপ, দীপ, মিষ্টান্ন দিয়ে টুসুর গান গাওয়া হয়। এরপর পৌষমাসের সংক্রান্তির দিন তা নদীতে ভাসানো হয়। তুসু মূলত শস্য উৎসবের দেবী হলেও গ্ৰাম বাংলার মানুষের অন্তরে যেস্থান করে নিয়েছে তা মকর সংক্ৰান্তিতে গ্ৰামের নদী তটে হাজির হলেই টের পাওয়া যাবে।
মকর সংক্ৰান্তিতে টুসু ভাসানে মাতবে রাঢ় বাংলা
Loading...